অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট (OII) এর এক গবেষণা অনুসারে জানা যায় যে, বাংলাদেশ অনলাইন শ্রমিক সরবরাহের পছন্দের তালিকায় বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই গবেষণার ফলাফল অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট (OII) ওয়েবসাইট এ প্রকাশ করা হয়, যেখান থেকে জানা যায় ইন্ডিয়া মোট বিশ্ব অনলাইন শ্রমিক এর ২৪% এবং যুক্তরাষ্ট্র ১২% অনলাইন শ্রমিক সরবরাহ করে যথাক্রমে প্রথম ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ এর অবদান সেখানে ১৬%। নিচের ছবিটি একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে আমারা দেখতে পারি, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে যেসকল সেক্টরে তা হলো “সফ্টওয়্যার বিকাশ এবং প্রযুক্তি”, “সৃজনশীল এবং মাল্টিমিডিয়া” এবং “ক্লারিকাল এবং ডেটা এন্ট্রি”। যেসকল কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে অনলাইন শ্রমিক সরবরাহের এই অবদান রাখতে পেরেছে চলেন সে সকল কারণ নিয়ে কথা বলা যাক ।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় অংশই তরুণ। আর, তরুণরাই পারে একটি দেশের অর্থনীতির গতি পরিবর্তন করতে। মোট জনসংখ্যার ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা এখন বেশি, যা জনসংখ্যার প্রায় ৩২ শতাংশ (উৎসঃ CIA – The World Factbook)। এই তরুণ প্রজন্মের অন্যান্য পেশার পাশাপাশি পছন্দের তালিকায় যোগ দিয়েছে আউটসোর্সিং। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং-এর ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। গত তিন-চার বছরে এই পেশা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকেই আউটসোর্সিংকে তাদের খন্ডকালীন পেশার পাশাপাশি স্থায়ী পেশা হিসেবেও বেছে নিচ্ছেন ।
বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগ অনুসারে বাংলাদেশে মোট ফ্রিল্যান্সার এর সংখা ৬৫০,০০০। যাদের মধ্যে বর্তমানে ৫০০,০০০ জন সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের পছন্দের পেশার তালিকায় ফ্রিল্যান্সিং থাকার প্রধান কারণগুলো হলো গতানুগতিক অফিস সময়ের মধ্যে ফ্রিল্যান্সার সীমাবদ্ধ নয় এবং একজন ফ্রিল্যান্সারের যেরকম রয়েছে কাজের ধরণ নির্ধারণের স্বাধীনতা, তেমনি রয়েছে, যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা। যেকোনো জায়গায় থেকে যেকনো সময়ে তারা কাজ করতে পারেন। এছাড়াও তারা বিড করার মধ্যমে তাদের কাজের মূল্য ঠিক করতে পারেন।
বাংলাদেশে বেকারত্বের হার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০১১ অবধি বাংলাদেশ এ বেকারত্বের হার ছিল ৪.৩% যা ২০২০ সালে এসে দাড়িয়েছে ৫.৩%। এছারাও ২০১৯ সালে গ্লোবাল জিগ-অর্থনীতি সূচক অনুসারে বাংলাদেশ বেকারত্বের দিক থেকে অষ্টম স্থান এ রয়েছে । প্রতি বছর যে সংখ্যক ছাত্রছাত্রী স্নাতক পাশ করে বের হচ্ছে সে সংখ্যক কর্ম সংস্থান দেশে না থাকার কারণে চাকরির বাজার আগের চেয়েও অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে এবং বেকারত্ব আমদের দেশে অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। এই বেকারত্বের অভিষাপ থেকে মুক্তি পেতে বেশির ভাগ মানুষ এখন আউটসোর্সিং-কে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে ।
প্রাইভেট সেক্টরগুলোতেও নেই কোনো স্বাধীনতা। প্রাইভেট চাকরিতে যেহারে শ্রম দেওয়া লাগে সে অনু্যায়ি পারিশ্রমিক না পাওয়ার কারণে বেশির ভাগ মানুষ সরকারি চাকরির পিছে ছুটছে । যার কারণে, বাড়ছে সরকারি চকরির বাজারে প্রতিযোগিতা। এজন্যে সরকারি চাকরি পাওয়া এখন সোনার হরিণ পাওার মতো অবস্থায় দাড়িয়েছে। সবকিছু ভেবে সদ্য স্নাতক পাশ করা তরুনরা বিভিন্ন সফট স্কিল শেখার মাধ্যমে আউটসোর্সিং-কে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে।
করোনা মহামারির কারণে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে অনেক মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন স্টাডিজ ইনস্টিটিউট অনুসারে করোনা মহামারির কারনে এখন পর্যন্ত ১৩% মানুষ বেকারত্বের শিকার হয়েছে। এই সংকটময় সময়ে আউটসোর্সিং এর দিকে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়ছে এবং বাড়বে বলে ধারণা করা যায়।
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনটি মার্কেটপ্লেস হলো Odesk.com, Freelancer.com, Elance.com। যেহেতু, এখন বাইরে গিয়ে চাকরি খোজা কঠিন হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর পক্ষেও তাদের ব্যবসা সচল রাখাও দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে তাই বাংলাদেশের নিজস্ব মার্কেটপ্লেস একটি সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে। খুব সাম্প্রতিক এমনি একটি মার্কেটপ্লেস তৈরি করা হয়েছে যেটা হলো http://instantkaj.com/। এই মার্কেটপ্লেস এর দ্বারা আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের অত্যাবশ্যক কাজ করিয়ে নিতে পারবে এবং আমদের দেশের কর্মসংস্থান এটি আরেকটি মাধ্যম তৈরি হলো। আশা করা যায় বাংলাদেশের মানুষ বাইরের দেশের পাশাপাশি নিজের দেশে ফ্রিল্যান্সিং-এ তাদের অবদান রাখবে।
Written by-
Musabira Akter
Military Institute of Science and Technology (MIST)
Leave Your Comment