বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনকে একটা “গ্রিন হাউজ” কল্পনা করলেও বোধহয় মন্দ হয় না। আমাদের প্রতিদিনকার রুটিনেও আজকাল গ্রিন হাউজের মতো বদ্ধ ঘরে কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসে থাকা ছাড়া খুব বেশি কিছু নেই, কারণ সবকিছুতেই “অনলাইন” ট্যাগ লেগে গেছে। করোনাকালীন সময়ে সবকিছুতেই ব্যাপক পরিবর্তনের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে নতুন অনেক সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে যার মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং অন্যতম। ফেসবুক থেকে শুরু করে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম সবখানেই “গ্রাফিক্স ডিজাইন” টপিকটা যেন “হটকেক”। কারণটাও খুবই স্পষ্ট। করোনাকালীন সময়ে ই-কমার্স বেড়েছে, পাশাপাশি নামি-দামি সব প্রতিষ্ঠানও অনলাইনেই নিজেদের প্রচারণায় ব্যস্ত আর এইক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের চাহিদা ব্যাপক। গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কথাটা শুনলেই আমাদের মনে প্রথমেই ভেসে উঠে অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর কিংবা ফটোশপ অ্যাপ্লিকেশন এর নাম। কিন্তু, দেখা যায় অনেকেই এই দুটো ব্যবহার করতে হিমশিম খায়, অনেকে হয়তো রেডিমেড টেম্পলেট খুঁজে যেখানে তারা মনের মত করে নিজেদের ডিজাইন বানাতে পারবে। এখানেই ক্যানভা একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ক্যানভা সম্পর্কে অনেকে না জানলেও এটি বিশেষ করে বিগিনারদের জন্য বেশ চমৎকার একটি টুল। ইলাস্ট্রেটর এর মতো বাহারি ফাংশনালিটি না থাকলেও বেসিক গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে ক্যানভা অনেকটাই কার্যকর। বিভিন্ন পোস্টার ডিজাইন থেকে শুরু করে লোগো, কার্ড, ব্যানার, লিফলেট ইত্যাদি ডিজাইন করা কিংবা ইউনিভার্সিটি বা অফিসের প্রেজেন্টেশন বানানো সবক্ষেত্রেই ক্যানভা কাজে লাগতে পারে। ক্যানভার আরেকটি চমৎকার ফিচার হলো এর বিল্ট-ইন সিভি টেম্পলেটগুলো থেকে যে কেউই নিজের কিংবা অন্যের জন্য আকর্ষণীয় সিভি বানিয়ে নিতে পারে। এর একটি পেইড ভার্সনও রয়েছে, তবে ফ্রি ভার্সন দিয়েও মোটামুটি সব কাজই করা যায়। কাজেই বর্তমান অনলাইনের যুগে ক্যানভা অনেকাংশেই লাইফসেভার!!
যে ১৩-টি কারণে আপনি ক্যানভা ব্যবহার করতে পারেন :
১) ক্যানভা সম্পূর্ণ ওয়েব-বেজড হওয়ায় আলাদাভাবে অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করার ঝামেলা নেই। প্রয়োজনমত তাদের ওয়েবসাইটে গিয়েই নিজের কাজ করা যায়।
২) ক্যানভাতে ইউজার একাউন্টে সবগুলো ডিজাইনই অটো সেভ হয়ে যায়। কাজেই পরবর্তীতে যে কোনো সময়ে আগের যে কোনো ডিজাইনে ইচ্ছেমতো পরিবর্তন আনা যায় কিংবা নিজের সবগুলো ডিজাইনও একইসাথে দেখা যায়।
৩) ওয়েব-বেজড হওয়ায় যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে একাউন্টে লগ-ইন করে নিজের কাজ করা যায়।
৪) কাজ শেষে ডিজাইন কিংবা প্রেজেন্টেশন pdf, jpg, png, svg, gif, mp4 ইত্যাদি বিভিন্ন ফরম্যাটে ডাউনলোড করা যায়। তাই ব্যবহারকারী নিজের সুবিধামত যেকোনো ফরম্যাট নিতে পারে।
৫) হাজারো টেম্পলেট থেকে নিজের পছন্দমতো টেম্পলেট সিলেক্ট করে ডিজাইন বানানো যায়।
৬) ব্যবহার করা খুবই সহজ, তাই বিগিনার কিংবা প্রফেশনাল যে কেউই ক্যানভা দিয়ে ডিজাইন করতে পারে।
৭) ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস থাকায় ব্যবহারে দ্রুত অভ্যস্ত হওয়া যায় এবং অল্প সময়েই নিজের কাজ করা যায়।
৮) নিজের ইচ্ছেমতো ছবি, ভিডিও, আইকন ইত্যাদি এড করা যায়। এছাড়াও বিল্ট-ইন ছবি, ভিডিও, আইকন ইত্যাদিও ব্যবহার করা যায়।
৯) ডিজাইনে ছবি এড করার পূর্বে তা এডিট করা যায়।
১০) ডিজাইনে টেক্সট এড করার পাশাপাশি তাতে অ্যানিমেশন, ট্রানজিশন ইত্যাদি যুক্ত করা যায়।
১১) ক্যানভার একটি মোবাইল অ্যাপও রয়েছে। কাজেই কম্পিউটারে ডিজাইন করলেও পরবর্তীতে তা সহজেই মোবাইলে ডাউনলোড করা কিংবা, মোবাইল দিয়েই টুকটাক ডিজাইন করা সম্ভব।
১২) একসাথে টিম-আপ করে কয়েকজন মিলেও ক্যানভাতে কাজ করা যায় যেটি বেশ সুবিধাজনক।
১৩) সরাসরি ক্যানভা থেকেই নিজের প্রেজেন্টেশন লাইভে প্রেজেন্ট করা যায় নির্দিষ্ট অডিয়েন্সের সামনে।
অতএব, সহজেই বলা যায় যে, ডিজাইন বানানোর ক্ষেত্রে ক্যানভা প্রায় সকল কাজের কাজি!
Written by-
Aynul Haiyat Seyam
Islamic University of Technology (IUT)
Leave Your Comment