গত অধ্যায়ে আমি পারমাণবিক ঘড়ি নিয়ে বলেছি। একটা পারমাণবিক ঘড়ি যে কতটা নির্ভুল সময় গণনা করতে পারে, তার সাথে পাঠকদের পরিচয় করানো হয়েছে। এরকম নজিরবিহীন সঠিক পরিমাপ সাধারণভাবে ভাবলে হয়তো কল্পনা করাও দুস্কর!
এটা জানার পর অনেকের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, আদৌ কেন আমাদের এই ধরণের একটা নির্ভুল ঘড়ির প্রয়োজন? এই বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করার আগে প্রশ্নটা আমার মনেও এসেছিল। অনেকে আবার চট করে এই ধারণা করে বসেন যে এই ধরণের ঘড়ির বাস্তব জীবনে কোনও ব্যবহারই নেই; এটা কেবল গবেষকদের খামখেয়ালিপনা। কিন্তু অনেক আধুনিক প্রযুক্তি ঠিকমতো কাজ করতে হলে নির্ভুল সময় গণনা, তার সম্প্রচার এবং বিভিন্ন যন্ত্রাদির মধ্যে যথাযত সময়ভিত্তিক সমন্বয়সাধন (synchronization) অপরিহার্য। যেমন, এর প্রয়োজন সাধারণ ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তিভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থায়, স্যাটেলাইট দ্বারা পরিচালিত নেভিগেশন-এ, স্বয়ংক্রিয় পরিষেবা, ডিজিটাল সংরক্ষণ এবং আর্থিক লেনদেনে, ই-বাণিজ্যে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে বা সাইবার সুরক্ষায়, এছাড়া আরো অনেক ক্ষেত্রে। সুতরাং, কোনও দেশকে যদি এইসব উচ্চমানের প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হয়, তাকে সঠিক সময় পরিমাপের দিকে মন দিতেই হবে। নইলে জাতীয় সুরক্ষা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা বিশ্ব নেতৃত্বের জায়গাতে সে পিছিয়ে পড়বে।
এবার আমি পাঠককে দেখাবো কিভাবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বা স্ট্যান্ডার্ড (standard) অনুযায়ী একটা সময় অঞ্চলের (time zone) গড় স্থানীয় সময়ের হিসেব রাখা হয়। স্থানীয় সময় বলতে এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটা দেশের জাতীয় সময়ের কথা বলা হচ্ছে। এই সময়ের হিসেব রাখার দুটি অংশ রয়েছে – স্থানীয় স্ট্যান্ডার্ড সময় (local standard time) নির্ধারণ এবং সেটিকে আন্তর্জাতিক মানের সাথে মিলিয়ে রাখা। এই সময় নির্ধারণ কিন্তু পারমাণবিক ঘড়িগুলির উপরই দাঁড়িয়ে আছে।
Leave Your Comment